Judiciary: Bangladesh Skip to main content
 

পিরোজপুর জেলার বিচার বিভাগের পটভূমি

 

‘‘ফিরোজ শাহের আমল থেকে ভাটির দেশের ফিরোজপুর,

বেনিয়া চক্রের ছোঁয়াচ লেগে পাল্টে হলো পিরোজপুর।’’

         

সুন্দরবনের কোলঘেঁষা কালীগঙ্গা, বলেশ্বর, দামোদর, সন্ধ্যা বিধৌত প্রাকৃতিক সবুজের লীলাভূমি পিরোজপুর জেলা। বৈচিত্র্যে ভরপুর পিরোজপুর জেলার উত্তরে গোপালগঞ্জ, উত্তর-পূর্বে বরিশাল ঝালকাঠী, দক্ষিণ-পশ্চিমে বাগেরহাট এবং দক্ষিণ-পূর্বে বরগুনা জেলা অবস্থিত। জেলার একদিকে লবণ পানি অন্য দিকে মিঠা পানির অবস্থান। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে বাকেরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন নদী গর্ভে, মোহনায় ছোট ছোট দ্বীপাঞ্চল সৃষ্টি এবং এর দ্রুত বৃদ্ধি হতে থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের সুন্দরবনের জঙ্গল কাটা হলে আবাদযোগ্য ভূমির আয়তনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সময় ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক বিদ্রোহ, পিরোজপুরের কালীগঙ্গা, কচাঁ, বলেশ্বর প্রভৃতি নদীতে মগ জলদস্যুদের উপদ্রব, বিশেষত: সকল নদীতে চুরি, ডাকাতি, লুন্ঠনসহ বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে সাধারণ প্রশাসন এবং ভূমি প্রশাসনের সুবিধাজনক অধ্যায় সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এবং ফৌজদারি দেওয়ানি বিরোধের বিচারকার্য তড়িৎ সম্পাদনের লক্ষ্যে পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। বাকেরগঞ্জ তদানীন্তন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এইচ..আর.আলেকজান্ডার ১৮৫৬ সালের ২৪ এপ্রিল পিরোজপুরে মহকুমা স্থাপনের প্রস্তাব দেন। ১৮৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। পিরোজপুর মহকুমা স্থাপনের সংগে সংগে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য পাড়েরহাট বন্দর সংশ্লিষ্ট টগড়া হতে থানা এবং কাউখালী হতে মুন্সেফি আদালত পিরোজপুর সদরে স্থানান্তর করা হয়।মহকুমা প্রতিষ্ঠার পর একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টরের উপর প্রশাসন কার্য এবং মুন্সেফের উপর দেওয়ানি বিচারের কার্যভার অর্পণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে পিরোজপুর মহাকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হলে পিরোজপুর জেলায় দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার প্রথম জেলা ও দায়রা জজ ছিলেন জনাব মোঃ আব্দুল কাদের খান এবং বর্তমানে জেলা ও দায়রা জনাব জজ মোঃ মহিদুজ্জামান হিসেবে কর্মরত আছেন । ১লা নভেম্বর, ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের মাধ্যমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালত, পিরোজপুর প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জনাব আবু জাফর মোঃ নোমান হিসেবে কর্মরত আছেন।

আদালতের অবকাঠামো ও বিচারিক কার্যক্রম

পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতটি একটি ৩ তলা বিশিষ্ট ভবন। আদালত চত্বরে পৃথক একটি রেরর্ডূ রুম আছে। জেলা জজ আদালত ভবনে ম্যাজিস্ট্রেসীর বিচারিক কার্যক্রম চলমান আছে। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের কাজ বর্তমানে নির্মাণাধীন আছে। জেলা ও দায়রা জজ মহোদয়ের নিজস্ব বাস ভবন রয়েছে। ১৯৮৩ সালে মঠবাড়িয়া উপজেলায় উপজেলা মুন্সেফ আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দেওয়ানী কার্যক্রম চলমান থাকে। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে মুন্সেফী আদালতটি জেলা সদরে স্থানান্তর হয়। তবে ২০০৭ সাল হতে পূর্বের মুন্সেফী আদালত ভবনে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ম্যাজিস্ট্রেসী কার্যক্রম চলমান আছে। ২০১৮ সালে জেলা সদরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল, জেলা লিগ্যাল এইড অফিস ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৬৬ সালে জেলা আইনজীবি সমিতি স্থাপিত হয়। বর্তমানে  জেলা সদরে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, যুগ্ম জেলা জজ আদালত , সিনিয়র সহকারী জজ আদালত, সহকারী জজ আদালত, পারিবারিক আদালত, স্মল কজ আদালত, অর্থ  ঋণ  আদালত, দ্রুত বিচার আদালত, শিশু আদালত, নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনাল, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রে আদালত আছে। জজশীপ ও ম্যাজিস্ট্রেসী মিলিয়ে জেলা ও দায়রা জজ সহ ১৫ জনের অধিক বিচারক ও ২০০ এর অধিক আইনজীবী বিচারিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন।